সুমন শেখ (৩২) দীর্ঘদিন ধরে দৃষ্টিহীনতায় ভুগছেন। সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতিতে কর্ণিয়ার জন্য আবেদন করেছেন প্রায় ৬ মাস হল। অপেক্ষায় রইলেন কোনো এক মহৎ হৃদয়ের মরণোত্তর চক্ষুদাতার আশায় যার দানকৃত কর্ণিয়া সুমন শেখের দৃষ্টি ফিরিয়ে দিবে।

কিন্তু হঠাৎ করেই রোববার (১৮ এপ্রিল) একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় সুমন শেখের ছোট ভাই সুজন শেখ (৩০) মারা যান। প্রিয়জনের শোক কাটিয়ে উঠা সহজ নয়। ছোট ভাইয়ের এই অপ্রত্যাশিত মৃত্যু মেনে নেয়া সুমন শেখের জন্যও সহজ ছিল না।

তবুও সুমন শেখ সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতিতে যোগাযোগ করলেন মৃত ভাইয়ের কর্ণিয়া দান করার জন্য। জানতে পারলেন মৃত ভাইয়ের চোখের কর্ণিয়া তার চোখে প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে তিনিও ফিরে পেতে পারেন দৃষ্টি।

অবশেষে সোমবার (১৯ এপ্রিল) জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে চক্ষু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আব্দুল কাদেরের মাধ্যমে সফল কর্ণিয়া প্রতিস্থাপন হল সুমন শেখের। ছোট ভাইয়ের কর্ণিয়ায় দৃষ্টি ফিরে পেলেন বড় ভাই। এভাবে পরিবারের সদস্যের মাধ্যমেও দৃষ্টি ফিরে পেতে পারেন অন্ধ ব্যাক্তি।

১৯৮৪ সাল থেকে অন্ধত্ব মোচনের লক্ষ্যে কাজ করছে সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতি। বাংলাদেশে বিদ্যমান আইন মোতাবেক যে কোন ব্যক্তি জীবিত অবস্থায় কিংবা মৃত্যুর পর তার আইনানুগ নিকট আত্মীয়ের অনুমতি সাপেক্ষে মরণোত্তর চক্ষুদান বিধি সম্মত।

চোখে আঘাত প্রাপ্ত হলে, বিভিন্ন দুর্ঘটনায়, কিংবা কর্ণিয়ায় আক্রান্ত বিভিন্ন রোগের মাধ্যমে যেকোনো মানুষের চোখের কর্ণিয়া নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এর একমাত্র সমাধান কর্ণিয়া প্রতিস্থাপন। এভাবেই একজন মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া চোখ ফিরিয়ে দিতে পারে একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর হারানো দৃষ্টি।

অনেকে চক্ষুদান বিষয়ে নানা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভোগে। এর মূল কারণ সচেতনতার অভাব অথবা ধর্মীয় ভুল ব্যাখ্যা। তাই কুসংস্কার ভুলে মরণোত্তর চক্ষুদানে অঙ্গীকারবদ্ধ হতে সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতি আহ্বান জানিয়েছে। একইসাথে এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে সরকার, গণমাধ্যম, স্বেচ্ছাসেবীসহ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।